বাবা।
ছোটবেলায় শব্দটি একটি আতংকের নাম হলেও বড় হতে হতে বুজতে পারলাম বাবা মানে হল আস্থার প্রতীক।
জন্মের আগে মা যেমন আমায় দশমাস দশদিন পেটে ধরেছিল, তেমনি আমি যেন পৃথিবীতে সুস্থভাবে আলো দেখতে পারি তা নিশ্চিত করেছেন আমার বাবা।
ছোটবেলায় আমার হাত ধরে যিনি আমাকে হাঁটা শিখিয়েছিলেন তিনি আমার বাবা। যদিও বয়স বাড়ার সাথে সাথে দৌড়াতে শিখার পর পিছনে ফিরে কখনো বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয়নি, বরং অতিরিক্ত দুরন্তপনার জন্য যখন তিনি রুষ্ট হতেন তখন মনে হত পৃথিবীতে উনিই বোধহয় সবচেয়ে খারাপ মানুষ। তখন তো বুজিনি যে এই খারাপ মানুষটিই আমার সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী। উনি আমার কাছে খারাপ হয়েছিলেন যাতে আমি ভালোভাবে চলতে শিখি।
ছোটবেলায় পড়ালেখার জন্য বাবার হাতে মার খেতে খেতে যখন চিন্তা করতাম নিজের বাচ্চার উপর এতটা নির্দয় মানুষ কেমনে হতে পারে? তখন হয়ত খেয়াল করিনি, তবে আমি নিশ্চিত, মার খেয়ে যখন কান্না করে ঘুমুতাম তখন নিঃশব্দে বাবা নিশ্চয় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন।
আমায় জন্ম দিয়েছেন আমার মা, কিন্তু যে মানুষটি আমাকে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষাসহ আমায় ভালোভাবে বড় হয়ে উঠার পরিবেশ দিয়েছেন তিনি আমার বাবা। বাবা আছেন বলেই হয়ত আমাকে চিন্তা করতে হয়না আজ বাসায় গিয়ে কি খাব, আমার টিউশন ফি কে দেবে, বাসা ভাড়া কিভাবে দিতে হয়। বরং আমরা চিন্তা করি রিউস কেন ইনজুরিতে?, কে সেরা? মেসি না রোনালদো?, বিশ্বকাপটা সন্ধ্যায় হলে কি হত?
এমনকি কলেজে পড়ার সময়ও যখন বাবার সাথে আমার মতের অমিল হত তখন ভাবতাম, অনেকের বাবাই তো অসুস্থ হয়, আমার বাবা অসুস্থ হয় না কেন?(আল্লাহ্ মাফ করুক) আজ বুজতেসি, বাবারা অসুস্থ হওয়া মানে কি? বাবারা হলেন আমাদের মাথার উপর ছাদের মত। যার মাথার উপর ছাদ নেই, সেই জানে এর মর্মার্থ কি।
বাবা সম্পর্কে সবকিছু লিখতে গেলে হয়ত এই পোস্ট কখনো ফেসবুক ওয়ালের মুখ দেখবে না। তাই আপাতত এইখানেই ইতি টানলাম। সব শেষে শুধু এতটুকুই বলতে চাই, বাবা হল সেই অদৃশ্য দেয়াল যিনি না থাকলে হয়ত অনেক আগেই আমি ভেঙ্গে গুঁড়ো হয়ে রাস্তায় মিশে যেতাম।